শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। টানা তিনদিন সাক্ষ্যগ্রহণে মামলার বাদী শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যান্য সাক্ষীদের আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন আদালত ।
আজ বুধবার (২৫ আগস্ট) দিনব্যাপী সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কক্সবাজার জজ ও দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, ‘২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণের পর মামলার বাদী মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহারিয়ার ফেরদৌস এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন। বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে বিজ্ঞ আদালত।
সন্ধ্যায় আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাত সাংবাদিকদের জানান, মেজর সিনহা পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। আশাকরি বিজ্ঞ আদালত ন্যায় বিচার করবেন। ‘
মামলার বাদী ও মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস জানান, মামলার বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। মামলা দ্রুত শেষ হবে কি হবে না এটি সাক্ষীদের উপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয়। খুব সুন্দর প্রক্রিয়ায় বিচার কার্যক্রম চলছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী, আমরা ন্যায়বিচার পাব’
আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত জানান, মামলার এজাহার এবং জবানবন্দিতে সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বক্তব্যে গড়মিল রয়েছে। তিনি এজাহারের নানা অসংগতি আদালতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন’
এর আগে গত ২৩ আগস্ট মামলায় সাক্ষ্যদানের ধার্য দিনের প্রথম দিনে আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। পরে দ্বিতীয় দিন বিকাল ৫ টা ২০ মিনিটে শেষ হয় তাকে ১৫ আসামীর আইনজীবীর জেরা। পরে আদালতে সাক্ষ্য দেন ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়ীতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামী টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামীদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাস ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার আসামীরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরির্দশক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব। গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচার মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
ভয়েস/আআ